আধুনিক যুগের ২৫ জন শ্রেষ্ঠ দার্শনিক কী বলতে চায় আপনাকে
আমরা কীভাবে চিন্তা করি, কীভাবে জগতকে দেখি, কিংবা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র কীভাবে চলে, এর অনেকটাই নির্ধারিত হয়েছে গত কয়েক শতাব্দীতে আসা কিছু অসাধারণ মানুষের চিন্তাধারার মাধ্যমে। সপ্তদশ শতাব্দী থেকে শুরু হওয়া 'আধুনিক দর্শন' মানুষের চিন্তার জগতকে ধর্মীয় গোঁড়ামি থেকে বের করে যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানবকেন্দ্রিকতার দিকে নিয়ে গেছে।
কিন্তু এই দর্শনগুলো কি শুধুই তাত্ত্বিক? একদমই না। রেনে দেকার্তের সংশয় থেকে শুরু করে সার্ত্রের অস্তিত্ববাদ, সবই আমাদের প্রতিদিনের জীবন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং বেঁচে থাকার লড়াইয়ে প্রাসঙ্গিক। আজকের এই লেখায় আমরা আধুনিক যুগের ২৫ জন শ্রেষ্ঠ দার্শনিকের চিন্তাধারা এবং বাস্তব জীবনে সেগুলোর প্রয়োগ নিয়ে আলোচনা করব।
আধুনিক চিন্তার ভিত্তিপ্রস্তর
আধুনিক দর্শন শুরু হয়েছিল প্রশ্ন করার মাধ্যমে, আমরা কী জানি এবং কীভাবে জানি?
১. রেনে দেকার্ত [১৫৯৬-১৬৫০]
সন্দেহ হলো জ্ঞানের সূচনা।
তাকে 'আধুনিক দর্শনের জনক' বলা হয়। দেকার্ত বিশ্বাস করতেন যে সত্যে পৌঁছানোর একমাত্র নির্ভরযোগ্য পথ হলো সবকিছুকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। তিনি প্রচলিত সব জ্ঞান, এমনকি নিজের ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতাকেও সন্দেহের তালিকায় ফেলেছিলেন। তার মতে, একমাত্র নিশ্চিত সত্য হলো আমাদের চিন্তাশক্তি, কারণ সন্দেহ করতে গেলেও চিন্তা করতে হয়। এই উপলব্ধি থেকেই তার বিখ্যাত উক্তি "Cogito, ergo sum" (আমি চিন্তা করি, তাই আমি আছি) এর জন্ম। দেকার্তের এই 'পদ্ধতিগত সংশয়' পরবর্তীকালে বিজ্ঞান ও দর্শনের মূল ভিত্তি হয়ে দাঁড়ায়।
বর্তমানের তথ্য-প্রযুক্তির যুগে, যেখানে ভুয়া খবর ও ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি, সেখানে দেকার্তের দর্শন অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। কোনো কিছু দেখেই বিশ্বাস না করে, তার সত্যতা যাচাই করার মানসিকতা আমাদের প্রতারণা থেকে বাঁচাতে পারে।
২. জন লক [১৬৩২-১৭০৪]
কোনো মানুষের জ্ঞানই তার অভিজ্ঞতার বাইরে যেতে পারে না।
লক ছিলেন অভিজ্ঞতাবাদের অন্যতম প্রধান প্রবক্তা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের মন জন্মের সময় একটি 'সাদা কাগজ' বা অলিখিত ফলকের মতো থাকে। আমাদের সব জ্ঞান, ধারণা ও বিশ্বাস কেবল ইন্দ্রিয়লব্ধ অভিজ্ঞতা থেকেই আসে। লকের এই ধারণা জন্মগত অধিকার বা রাজাদের দৈব অধিকারের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছিল। রাজনৈতিক দর্শনে তিনি মানুষের প্রাকৃতিক অধিকার, জীবন, স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের কথা বলেন, যা আধুনিক উদারনৈতিক গণতন্ত্রের ভিত্তি স্থাপন করে।
শিশু শিক্ষা ও লালন-পালনে লকের দর্শন গুরুত্বপূর্ণ। শিশুরা তাদের পরিবেশ থেকে শেখে, তাই তাদের সামনে ইতিবাচক উদাহরণ উপস্থাপন করা জরুরি। এছাড়াও, তার দর্শন আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে মানুষ জন্মগতভাবে সমান এবং সবারই কিছু মৌলিক অধিকার রয়েছে।
৩. ডেভিড হিউম [১৭১১-১৭৭৬]
যুক্তি হলো আবেগের দাস, এবং একে শুধু আবেগের দাস হিসেবেই থাকা উচিত।
স্কটিশ দার্শনিক হিউম তার চরম সংশয়বাদ এবং অভিজ্ঞতাবাদের জন্য পরিচিত। তিনি যুক্তি দেন যে আমাদের কার্যকারণ সম্পর্কে কোনো প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা নেই; আমরা শুধু দেখি একটি ঘটনার পর আরেকটি ঘটনা ঘটছে। আমাদের মন অভ্যাসের বশে ধরে নেয় যে প্রথমটি দ্বিতীয়টির কারণ। হিউম আরও বলেন যে নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো যুক্তি থেকে নয়, বরং আবেগ ও সহানুভূতি থেকে আসে। তার এই দর্শন বিজ্ঞান, ধর্ম এবং নীতিশাস্ত্রের প্রচলিত ধারণাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল।
আমরা প্রায়ই দাবি করি যে আমরা যৌক্তিক সিদ্ধান্ত নিই, কিন্তু হিউম দেখিয়েছেন যে আমাদের অনেক সিদ্ধান্তই আসলে আবেগতাড়িত। এই সচেতনতা আমাদের নিজেদের এবং অন্যদের আচরণকে আরও সহানুভূতির সাথে বুঝতে সাহায্য করে।
৪. ইমানুয়েল কান্ট [১৭২৪-১৮০৪]
অন্যকে কখনো শুধু উপায় হিসেবে ব্যবহার করো না, বরং সবসময় তাকে একটি উদ্দেশ্য হিসেবে গণ্য করো।
কান্ট যুক্তিবাদ ও অভিজ্ঞতাবাদের মধ্যে এক যুগান্তকারী সমন্বয় সাধন করেন। তার মতে, জ্ঞান অভিজ্ঞতা থেকে শুরু হয়, কিন্তু আমাদের মন কিছু পূর্বনির্ধারিত কাঠামো (যেমন সময়, স্থান ও কার্যকারণ) দিয়ে সেই অভিজ্ঞতাকে সাজায়। নীতিশাস্ত্রে কান্ট 'ক্যাটাগরিক্যাল ইম্পারেটিভ' বা শর্তহীন আদেশের ধারণা দেন। তার মতে, নৈতিকতা কোনো ফলাফল বা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে না; কিছু কাজ (যেমন মিথ্যা না বলা) সব সময়ই আমাদের কর্তব্য, পরিস্থিতি যাই হোক না কেন।
কান্টের দর্শন আমাদের শেখায় যে প্রতিটি মানুষের নিজস্ব মর্যাদা আছে। কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত সম্পর্কে কাউকে কেবল নিজের স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা অনৈতিক। আমাদের উচিত সততা ও ন্যায়পরায়ণতাকে সার্বজনীন নীতি হিসেবে মেনে চলা।
সমাজ, রাজনীতি ও বিপ্লব
এই দার্শনিকরা বদলে দিয়েছেন আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজের কাঠামো।
৫. কার্ল মার্ক্স [১৮১৮-১৮৮৩]
দার্শনিকরা কেবল জগতকে বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, কিন্তু আসল কাজ হলো তা পরিবর্তন করা।
মার্ক্সের দর্শন আধুনিক বিশ্বের রাজনীতি ও অর্থনীতিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছে। তিনি হেগেলের দ্বান্দ্বিক পদ্ধতিকে বস্তুবাদী রূপ দেন এবং বলেন যে ইতিহাসের চালিকাশক্তি কোনো পরম আত্মা নয়, বরং অর্থনীতি ও শ্রেণী সংগ্রাম। তার মতে, সমাজ সর্বদা দুটি প্রধান শ্রেণীতে বিভক্ত থাকে, শোষক (যারা উৎপাদনের মালিক) ও শোষিত (শ্রমিক)। মার্ক্স বিশ্বাস করতেন যে পুঁজিবাদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শেষ পর্যন্ত শ্রমিক শ্রেণীর বিপ্লবের মাধ্যমে একটি শ্রেণীহীন সাম্যবাদী সমাজের জন্ম দেবে।
আজকের বিশ্বেও ধনী-দরিদ্রের বৈষম্য, শ্রমিকদের অধিকার এবং কর্পোরেট শোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলনে মার্ক্সীয় দর্শন অনুপ্রেরণা জোগায়। এটি আমাদের সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো এবং ক্ষমতার বিন্যাস নিয়ে প্রশ্ন করতে শেখায়।
৬. জ্যাক রুশো [১৭১২-১৭৭৮]
মানুষ স্বাধীন হয়ে জন্মায়, কিন্তু সর্বত্র সে শিকলে বাঁধা।
রুশো ফরাসি বিপ্লবের বুদ্ধিবৃত্তিক ভিত্তি তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে আদিম অবস্থায় মানুষ ছিল সৎ, সুখী ও স্বাধীন, কিন্তু সভ্যতা, ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং সমাজ তাকে কলুষিত ও পরাধীন করেছে। তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্য সোশ্যাল কন্ট্রাক্ট'-এ তিনি বলেন, প্রকৃত স্বাধীনতা ফিরে পেতে মানুষকে 'সাধারণ ইচ্ছা'-এর অধীনে একত্রিত হতে হবে, যা সবার মঙ্গলের জন্য কাজ করবে।
আধুনিক গণতন্ত্রে আইনের শাসন এবং নাগরিকের দায়িত্ব, এগুলো রুশোর 'সামাজিক চুক্তি' এর প্রতিফলন। আমরা যখন ট্রাফিক আইন মানি বা কর দিই, তখন আমরা বৃহত্তর সমাজের মঙ্গলের জন্য আমাদের কিছু ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বিসর্জন দিই।
৭. থমাস হবস [১৫৮৮-১৬৭৯]
কৌতূহল হলো মনের লালসা।
হবস মানুষের প্রকৃতি সম্পর্কে খুব একটা উচ্চ ধারণা পোষণ করতেন না। তার মতে, প্রাকৃতিক অবস্থায় মানুষের জীবন ছিল "নিঃসঙ্গ, দরিদ্র, জঘন্য, পাশবিক এবং সংক্ষিপ্ত," কারণ মানুষ স্বভাবতই স্বার্থপর ও ক্ষমতা লোভী। এই ভয়াবহ নৈরাজ্য থেকে বাঁচতেই মানুষ একটি সামাজিক চুক্তির মাধ্যমে তাদের সমস্ত ক্ষমতা একজন সার্বভৌম শাসকের হাতে তুলে দেয়, যার প্রধান কাজ হলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
হবস আমাদের বোঝান কেন সমাজে একটি শক্তিশালী কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ বা সরকার প্রয়োজন। আইন-শৃঙ্খলা না থাকলে সমাজ যে ভেঙে পড়তে পারে, তা আমরা বিভিন্ন গৃহযুদ্ধ বা অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে দেখতে পাই।
৮. ভলতেয়ার [১৬৯৪-১৭৭৮]
আমি তোমার কথার সাথে একমত নাও হতে পারি, কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষার জন্য আমি জীবন দিতেও প্রস্তুত।
ফরাসি আলোকায়নের অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র ভলতেয়ার তার শানিত বুদ্ধি ও ব্যঙ্গাত্মক রচনার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। তিনি তৎকালীন ক্যাথলিক গির্জার ধর্মান্ধতা, কুসংস্কার এবং ফরাসি রাজতন্ত্রের স্বৈরাচারী শাসনের কঠোর সমালোচক ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে যুক্তি, বিজ্ঞান এবং সহনশীলতাই পারে একটি উন্নত সমাজ গড়তে। বাক স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় সহনশীলতার জন্য তার সংগ্রাম আজও মানবাধিকার আন্দোলনের পাথেয়।
ভলতেয়ারের দর্শন আমাদের শেখায় যে একটি সুস্থ গণতান্ত্রিক সমাজে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা থাকা অপরিহার্য এবং অন্যের মতামতের সাথে একমত না হলেও তাকে সেই মত প্রকাশের সুযোগ দিতে হবে।
৯. জন স্টুয়ার্ট মিল [১৮০৬-১৮৭৩]
একজন অতৃপ্ত মানুষ হওয়া একজন তৃপ্ত শূকর হওয়ার চেয়ে ভালো; একজন অসুখী সক্রেটিস হওয়া একজন সুখী মূর্খ হওয়ার চেয়ে ভালো।
মিল ছিলেন উপযোগবাদ এবং উদারনীতিবাদের একজন শক্তিশালী প্রবক্তা। তার 'অন লিবার্টি' গ্রন্থে তিনি ব্যক্তির স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো যুক্তি দেন। তার বিখ্যাত 'ক্ষতি নীতি' অনুযায়ী, একজন ব্যক্তির স্বাধীনতা কেবল তখনই সীমিত করা উচিত যখন তার কাজ অন্যের ক্ষতির কারণ হয়। এছাড়া, তিনি নারী অধিকার এবং সংখ্যালঘুর মত প্রকাশের স্বাধীনতার পক্ষেও সোচ্চার ছিলেন।
ব্যক্তি স্বাধীনতা বনাম সামাজিক নিয়ন্ত্রণ, এই চিরন্তন দ্বন্দ্বে মিলের দর্শন আজও প্রাসঙ্গিক। রাষ্ট্র বা সমাজ ব্যক্তির ব্যক্তিগত জীবনে কতটা হস্তক্ষেপ করতে পারে, তা নির্ধারণে মিলের নীতিগুলো পথ দেখায়।
অস্তিত্বের সংকট ও জীবনের অর্থ
যখন বিজ্ঞান ও প্রথাগত ধর্ম সব উত্তর দিতে পারল না, তখন এই দার্শনিকরা মানুষের অস্তিত্বের অর্থ খুঁজলেন।
১০. ফ্রেডরিখ নিৎশে [১৮৪৪-১৯০০]
যে নিজের জীবনের একটি 'কেন' খুঁজে পেয়েছে, সে প্রায় যেকোনো 'কীভাবে' সহ্য করতে পারে।
নিৎশে পশ্চিমা দর্শন ও নৈতিকতার ভিত্তিমূলে আঘাত করেছিলেন। তার "ঈশ্বর মৃত" ঘোষণাটি ছিল মূলত প্রচলিত ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধের পতনের প্রতীক। তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই মূল্যবোধহীন পৃথিবীতে মানুষকে নিজের জীবনের অর্থ নিজেই তৈরি করতে হবে। তার 'অতিমানব' (Übermensch) ধারণাটি এমন এক ব্যক্তির প্রতীক যিনি সমাজের চাপিয়ে দেওয়া নৈতিকতা অতিক্রম করে নিজের মূল্যবোধ সৃষ্টি করেন এবং জীবনকে পরিপূর্ণভাবে আলিঙ্গন করেন।
জীবনের কঠিন সময়ে, যখন সবকিছু অর্থহীন মনে হয়, তখন নিৎশের দর্শন আমাদের নিজের ভেতর থেকে শক্তি সঞ্চয় করতে এবং প্রতিকূলতাকে মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করে।
১১. জাঁ-পল সার্ত্র [১৯০৫-১৯৮০]
মানুষ স্বাধীন হতে দণ্ডপ্রাপ্ত।
বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান অস্তিত্ববাদী দার্শনিক সার্ত্রের মতে, মানুষের কোনো পূর্বনির্ধারিত প্রকৃতি বা উদ্দেশ্য নেই। "অস্তিত্ব সারসত্তার পূর্বগামী", অর্থাৎ আমরা আগে পৃথিবীতে আসি, তারপর আমাদের কাজের মাধ্যমে আমরা কে, তা নির্ধারণ করি। এই চরম স্বাধীনতা একই সাথে একটি বড় দায়িত্ব, যা অনেকের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে। সার্ত্র একে 'বদ বিশ্বাস' বলেছেন যখন মানুষ এই স্বাধীনতা অস্বীকার করে নিজেকে পরিস্থিতির শিকার বলে দাবি করে।
সার্ত্রের দর্শন আমাদের অজুহাত দেওয়া বন্ধ করতে শেখায়। আমাদের জীবনের বর্তমান অবস্থার জন্য আমরাই দায়ী, এই উপলব্ধি আমাদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে তুলে নিতে সাহায্য করে।
১২. আলবেয়ার কামু [১৯১৩-১৯৬০]
আত্মহত্যা করবে নাকি এক কাপ কফি খাবে, এটাই জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
কামুর দর্শন 'অ্যাবসার্ডিজম' এর ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। তার মতে, মানুষ সর্বদা জীবনের অর্থ খোঁজে, কিন্তু মহাবিশ্ব এ বিষয়ে নীরব ও উদাসীন। মানুষের এই অর্থ খোঁজার আকাঙ্ক্ষা এবং বিশ্বের অর্থহীনতার মধ্যকার সংঘাতই হলো 'অ্যাবসার্ড' বা অযৌক্তিক। কামু বলেন, আত্মহত্যা বা অন্ধ বিশ্বাস কোনো সমাধান নয়; বরং এই অর্থহীনতাকে মেনে নিয়ে বিদ্রোহের মাধ্যমে আনন্দের সাথে বেঁচে থাকাই হলো প্রকৃত মানুষের কাজ।
জীবনের অনেক ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে এবং আপাতদৃষ্টিতে অর্থহীন মনে হতে পারে। কামুর দর্শন আমাদের শেখায় যে সেই অর্থহীনতার মাঝেও ছোট ছোট আনন্দ উপভোগ করে বেঁচে থাকা সম্ভব এবং সেটাই জীবনের সার্থকতা।
১৩. সোরেন কিয়ের্কেগার্ড [১৮১৩-১৮৫৫]
দুশ্চিন্তা হলো স্বাধীনতার মাথা ঘোরা।
তাকে অস্তিত্ববাদের জনক বলা হয়। কিয়ের্কেগার্ড মনে করতেন যে হেগেলের মতো দার্শনিকরা জগতকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ব্যক্তিকে ভুলে গেছেন। তার মতে, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সত্যগুলো যুক্তি দিয়ে পাওয়া যায় না, বরং তা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও আবেগের বিষয়। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সত্যিকারের বিশ্বাস বা আস্থায় পৌঁছাতে হলে মানুষকে যুক্তির বাইরে গিয়ে একটি 'আস্থার উল্লম্ফন' (Leap of Faith) দিতে হয়।
আমরা যখন জীবনের বড় সিদ্ধান্তগুলো নিই, যেমন ক্যারিয়ার পরিবর্তন বা বিয়ে, তখন কোনো নিশ্চিত গ্যারান্টি থাকে না। কিয়ের্কেগার্ডের দর্শন আমাদের এই অনিশ্চয়তাকে মেনে নিয়ে সাহসের সাথে সিদ্ধান্ত নিতে উৎসাহিত করে।
১৪. আর্থার শোপেনহাওয়ার [১৭৮৮-১৮৬০]
সুস্বাস্থ্যই সবকিছু নয়, কিন্তু সুস্বাস্থ্য ছাড়া সবকিছুই শূন্য।
শোপেনহাওয়ারের দর্শন ছিল গভীরভাবে হতাশাবাদী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে জগত চালিত হয় এক অন্ধ, অযৌক্তিক 'বেঁচে থাকার ইচ্ছা' দ্বারা। এই ইচ্ছা কখনোই তৃপ্ত হয় না, তাই মানুষের জীবন মূলত দুঃখময় এবং অতৃপ্তিতে ভরা। তিনি মনে করতেন যে এই দুঃখ থেকে সাময়িক মুক্তি পাওয়া সম্ভব কেবল শিল্পকলা, সঙ্গীত এবং নান্দনিক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে, অথবা বৌদ্ধ দর্শনের মতো ইচ্ছা দমন করার মাধ্যমে।
শোপেনহাওয়ারের দর্শন আমাদের জীবনের প্রত্যাশাকে বাস্তবসম্মত করতে শেখায়। সর্বদা সুখের পেছনে না ছুটে, দুঃখকে জীবনের একটি অনিবার্য অংশ হিসেবে মেনে নিলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া সহজ হয়।
মন, ভাষা এবং বাস্তবতা
আমরা কীভাবে চিন্তা করি এবং ভাষার মাধ্যমে জগতকে কীভাবে প্রকাশ করি, এই দার্শনিকরা সেই গভীর ও জটিল সম্পর্কটি উন্মোচন করেছেন।
১৫. লুডভিগ উইটগেনস্টাইন [১৮৮৯-১৯৫১]
আমার ভাষার সীমানাই আমার জগতের সীমানা।
উইটগেনস্টাইন বিংশ শতাব্দীর বিশ্লেষণী দর্শনে বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন। তার প্রাথমিক কাজে তিনি বলেন যে ভাষা জগতকে চিত্রিত করে, এবং যা স্পষ্টভাবে বলা যায় না, তা নিয়ে নীরব থাকাই শ্রেয়। পরবর্তী জীবনে তিনি এই মত পরিবর্তন করে বলেন যে ভাষার অর্থ তার ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। তার মতে, দর্শন কোনো তত্ত্ব নয়, বরং একটি কার্যকলাপ যা আমাদের ভাষার বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত করে।
আমরা যে শব্দগুলো ব্যবহার করি, তা আমাদের চিন্তাকে প্রভাবিত করে। স্পষ্ট ও সঠিক ভাষা ব্যবহার করলে যোগাযোগ উন্নত হয় এবং অনেক অপ্রয়োজনীয় ভুল বোঝাবুঝি এড়ানো যায়।
১৬. বার্ট্রান্ড রাসেল [১৮৭২-১৯৭০]
ভয় হলো কুসংস্কারের প্রধান উৎস এবং নিষ্ঠুরতার অন্যতম প্রধান উৎস। ভয়কে জয় করাই হলো প্রজ্ঞার সূচনা।
রাসেল ছিলেন একাধারে গণিতবিদ, যুক্তিবিদ, দার্শনিক এবং সমাজ সংস্কারক। তিনি দর্শনে যৌক্তিক বিশ্লেষণের পদ্ধতি প্রবর্তন করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং অন্ধ বিশ্বাস মানবজাতির অনেক দুঃখের কারণ। তিনি যুক্তি, বিজ্ঞান এবং মানবতাবাদের ওপর ভিত্তি করে একটি সমাজের স্বপ্ন দেখতেন। তার স্বচ্ছ ও সাবলীল গদ্য সাধারণ মানুষের কাছে দর্শনকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
রাসেল আমাদের শিখিয়েছেন যে কোনো কিছুকে সত্য বলে মেনে নেওয়ার আগে তার স্বপক্ষে প্রমাণ খোঁজা উচিত। অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তিবাদী জীবনযাপন করাই প্রগতির পথ।
১৭. উইলিয়াম জেমস [১৮৪২-১৯১০]
আমার প্রজন্মের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার হলো যে, মানুষ তার মনের ভাব পরিবর্তন করে নিজের জীবনকে পরিবর্তন করতে পারে।
আমেরিকান দার্শনিক ও মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস প্রয়োগবাদ এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার মতে, কোনো ধারণা বা বিশ্বাস সত্য কি না, তা নির্ভর করে বাস্তব জীবনে তার উপযোগিতা বা কার্যকারিতার ওপর। যদি ঈশ্বরে বিশ্বাস কাউকে মানসিকভাবে শক্তিশালী করে এবং ভালো কাজ করতে উৎসাহিত করে, তবে জেমসের মতে সেই ব্যক্তির জন্য সেই বিশ্বাস 'সত্য'।
জেমসের দর্শন আমাদের ইতিবাচক চিন্তার শক্তি সম্পর্কে সচেতন করে। আমরা যদি বিশ্বাস করি যে আমরা সফল হব, তবে সেই বিশ্বাস আমাদের কাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং সাফল্যের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়।
অন্যান্য প্রভাবশালী চিন্তাবিদ
ইতিহাস, রাজনীতি, লিঙ্গবৈষম্য এবং ক্ষমতার অদৃশ্য কাঠামোগুলো কীভাবে আমাদের জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করে, এই চিন্তাবিদরা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন।
১৮. ভিলহেল্ম ফ্রিডরিখ হেগেল [১৭৭০-১৮৩১]
পৃথিবীতে মহান কোনো কিছুই আবেগ ছাড়া অর্জিত হয়নি।
হেগেলের দর্শন অত্যন্ত জটিল কিন্তু প্রভাবশালী। তিনি বিশ্বাস করতেন যে বাস্তবতা হলো একটি গতিশীল প্রক্রিয়া, যা দ্বন্দ্বের মাধ্যমে অগ্রসর হয়। একটি ধারণা তার বিপরীত ধারণার সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং এর ফলে একটি নতুন ও উন্নত ধারণার জন্ম হয়। এই দ্বান্দ্বিক পদ্ধতি ইতিহাস, সমাজ এবং চিন্তার বিবর্তন ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়।
আমাদের জীবনেও সমস্যা ও সংকট আসে, যা আমাদের বর্তমান অবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে। হেগেলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, এই সংকটগুলোই আমাদের বৃদ্ধি ও উন্নতির সুযোগ করে দেয়।
১৯. সিমোন দ্য বোভোয়ার [১৯০৮-১৯৮৬]
কেউ নারী হয়ে জন্মায় না, বরং নারী হয়ে ওঠে।
নারীবাদী অস্তিত্ববাদের পথিকৃৎ সিমোন দ্য বোভোয়ার তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'দ্য সেকেন্ড সেক্স' এ দেখিয়েছেন যে সমাজে নারীকে সর্বদা পুরুষের সাপেক্ষে 'অন্য' হিসেবে দেখা হয়েছে। তার মতে, নারীত্ব কোনো জন্মগত বিষয় নয়, বরং এটি সমাজ ও সংস্কৃতির দ্বারা চাপিয়ে দেওয়া একটি নির্মাণ। তার দর্শন নারীদের নিজেদের অস্তিত্ব ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করতে অনুপ্রাণিত করেছে।
লিঙ্গ বৈষম্য ও স্টেরিওটাইপ ভাঙতে বোভোয়ারের দর্শন আজও অপরিহার্য। এটি আমাদের শেখায় যে নারী বা পুরুষ হিসেবে আমাদের ভূমিকা সমাজ দ্বারা নির্ধারিত হতে পারে না; আমাদের নিজেদের পরিচয় তৈরির স্বাধীনতা আমাদেরই আছে।
২০. বারুখ স্পিনোজা [১৬৩২-১৬৭৭]
স্বাধীনতা হলো প্রয়োজনীয়তাকে উপলব্ধি করা।
স্পিনোজা ছিলেন একজন চরম যুক্তিবাদী। তার মতে, ঈশ্বর এবং প্রকৃতি একই সত্তা। সবকিছুই এক অসীম ঐশ্বরিক সত্তার অংশ এবং প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম মেনেই সবকিছু ঘটে। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের দুঃখের মূল কারণ হলো এই মহাজাগতিক নিয়ম না বোঝা। যখন আমরা বুঝতে পারি যে সবকিছু প্রয়োজনীয়তার কারণেই ঘটছে, তখন আমরা আবেগের দাসত্ব থেকে মুক্তি পাই এবং মানসিক প্রশান্তি লাভ করি।
স্পিনোজার দর্শন আমাদের শেখায়, জীবনের যেসব ঘটনা আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেগুলোকে মেনে নেওয়ার মাধ্যমেই আমরা প্রকৃত শান্তি পেতে পারি। অর্থাৎ আবেগকে যুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা।
২১. জেরেমি বেনথাম [১৭৪৮-১৮৩২]
প্রকৃতি মানুষকে দুটি সার্বভৌম প্রভুর শাসনের অধীনে রেখেছে: ব্যথা এবং আনন্দ।
বেনথাম ছিলেন একজন সমাজ সংস্কারক এবং উপযোগবাদের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বিশ্বাস করতেন যে মানুষের সব কাজের মূল প্রেরণা হলো সুখ লাভ এবং দুঃখ পরিহার। তাই, আইন ও সামাজিক নীতির লক্ষ্য হওয়া উচিত "সর্বাধিক মানুষের জন্য সর্বাধিক সুখ" নিশ্চিত করা। তিনি জেলখানা সংস্কার, নারী অধিকার এবং পশু অধিকারের মতো বিষয়েও অগ্রগামী চিন্তাভাবনা করেছিলেন।
জনকল্যাণমূলক নীতি নির্ধারণে বেনথামের উপযোগবাদী নীতি আজও ব্যবহৃত হয়। ব্যক্তিগত জীবনেও, কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আমরা প্রায়ই ভাবি কোন বিকল্পটি সবার জন্য সবচেয়ে ভালো ফলাফল বয়ে আনবে।
২২. মার্টিন হাইডেগার [১৮৮৯-১৯৭৬]
ভাষা হলো সত্তার আবাস।
হাইডেগারের দর্শন 'সত্তা' এর প্রশ্নকে কেন্দ্র করে আবর্তিত। তিনি মনে করতেন যে পশ্চিমা দর্শন সত্তার প্রকৃত অর্থ ভুলে গেছে। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষকে প্রকৃতি এবং নিজের প্রকৃত সত্তা থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, আমাদের জীবনকে যান্ত্রিক করে তুলেছে। তিনি মানুষকে তাদের অস্তিত্বের সীমাবদ্ধতা, বিশেষ করে মৃত্যুকে স্বীকার করে একটি 'প্রামাণিক' (Authentic) জীবন যাপনের আহ্বান জানিয়েছেন।
বর্তমানের ব্যস্ত ও প্রযুক্তি নির্ভর জীবনে হাইডেগারের দর্শন আমাদের থামতে এবং নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে ভাবতে শেখায়। আমরা কি সত্যিই বাঁচছি, নাকি শুধু যান্ত্রিকভাবে দিন পার করছি, এই প্রশ্ন তিনি আমাদের সামনে তুলে ধরেন।
২৩. মিশেল ফুকো [১৯২৬-১৯৮৪]
যেখানে ক্ষমতা আছে, সেখানে প্রতিরোধও আছে।
ফুকো দেখিয়েছেন যে জ্ঞান এবং ক্ষমতা একে অপরের সাথে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। সমাজে যা কিছু 'সত্য' বা 'স্বাভাবিক' বলে বিবেচিত হয়, তা আসলে ক্ষমতাবানদের তৈরি করা ধারণা। তিনি হাসপাতাল, কারাগার, স্কুল এবং পাগলা গারদের মতো প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন কীভাবে আধুনিক সমাজ মানুষের শরীর ও মনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ফুকোর দর্শন আমাদের সমাজের প্রচলিত নিয়ম এবং 'স্বাভাবিকতা'র ধারণাকে প্রশ্ন করতে শেখায়। আমরা বুঝতে পারি যে অনেক কিছুই ধ্রুব সত্য নয়, বরং ক্ষমতার কাঠামোর দ্বারা নির্মিত।
২৪. নোয়াম চমস্কি [১৯২৮-বর্তমান]
শিক্ষা ব্যবস্থা মূলত আনুগত্য শেখানোর একটি পদ্ধতি।
চমস্কি মূলত একজন ভাষাবিজ্ঞানী হলেও তার রাজনৈতিক দর্শন এবং সমাজ সমালোচনা তাকে বিশ্বজুড়ে পরিচিত করেছে। তিনি বিশ্বাস করেন যে মানুষের ভাষা শেখার ক্ষমতা জন্মগত। রাজনৈতিকভাবে তিনি নৈরাজ্যবাদী সমাজতন্ত্রের সমর্থক এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা, বিশেষ করে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি ও কর্পোরেট মিডিয়ার কঠোর সমালোচক। তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে মিডিয়া জনমত তৈরি করে এবং ক্ষমতাসীনদের স্বার্থ রক্ষা করে।
চমস্কির 'ম্যানুফ্যাকচারিং কনসেন্ট' তত্ত্ব আমাদের মিডিয়া এবং খবরের পেছনের রাজনীতি বুঝতে সাহায্য করে। এটি আমাদের আরও সচেতন নাগরিক হতে এবং ক্ষমতাসীনদের জবাবদিহি করতে উৎসাহিত করে।
২৫. সিমোন ওয়েল [১৯০৯-১৯৪৩]
মনোযোগ হলো প্রার্থনার সবচেয়ে বিরল এবং বিশুদ্ধ রূপ।
সিমোন ওয়েল ছিলেন একাধারে দার্শনিক, মরমী সাধক এবং রাজনৈতিক কর্মী। তার দর্শন গভীর আধ্যাত্মিকতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের এক অনন্য সংমিশ্রণ। তিনি বিশ্বাস করতেন যে সত্যিকারের নৈতিকতা এবং ভালোবাসা হলো অন্যের দুঃখের প্রতি সম্পূর্ণ এবং নিবিড় 'মনোযোগ' দেওয়া। তিনি নিজে শ্রমিকের কাজ করেছেন এবং যুদ্ধের সময় অনাহারে থেকেছেন সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
আজকের আত্মকেন্দ্রিক পৃথিবীতে ওয়েলের দর্শন আমাদের সহমর্মিতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়। কারো কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা বা কারো কষ্টে পাশে দাঁড়ানো, এগুলোই হলো প্রকৃত মানবিকতার প্রকাশ।
উপসংহার
এই ২৫ জন দার্শনিকের চিন্তাধারা কেবল ইতিহাসের কোনো অধ্যায় নয়, বরং এগুলো জীবন্ত এবং চলমান। আমরা যখনই কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ করি, জীবনের অর্থ খুঁজি, কিংবা কোনো প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নবিদ্ধ করি, আমরা আসলে এই দার্শনিকদের দেখানো পথেই হাঁটি। দর্শন কোনো বিলাসিতা নয়, এটি আমাদের আরও সচেতন, যুক্তিবাদী এবং সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে বেঁচে থাকার হাতিয়ার।
