জীবনযাপনের সহজ পদ্ধতি
আমাদের জীবন আসলে সহজ, কিন্তু আমরাই এটিকে জটিল করে তুলি। আমরা জীবনে এমন অনেক কিছু অর্জন করতে চাই, যেগুলো হয়তো বাস্তবে তেমন প্রয়োজন নেই। অথচ এসবের পিছনে ছুটতে ছুটতে আমরা জীবনের গুরুত্বপূর্ন অনেক সময় এবং মানসিক শান্তি হারিয়ে ফেলি। আজ এই লেখায় আমি শেয়ার করবো ৫টি সহজ উপায়, যেগুলো নিয়মিত ফলো করে আপনি একটা সহজ, সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল লাইফ লিড করতে পারবেন।
১. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমান
ঘুম ঠিক থাকলে শরীর এবং মন উভয়ে সুস্থ থাকে। রাতে ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কে "মেলাটোনিন" নামের একটি হরমন নিঃসৃত হয়, যা শরীরের অভ্যন্তরে হিলিংয়ের কাজ করে। এই হরমন শুধু রাতের ঘুমেই পাওয়া যায়। তাই রাতের ঘুম কখনো অবহেলা করবেন না। ঘুমকে বলবেন না "আজ আমার কাজ আছে", বরং কাজকে বলুন "আমার ঘুম আছে"। ঘুম আমাদের লাইফ স্টাইলকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। প্রতিদিন রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যান এবং খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠুন। এই সিম্পল অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারলে এটি আপনার জীবনকে দারুণভাবে পরিবর্তন করবে।
২. দৈনিক হাঁটুন
একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষের দৈনিক মিনিমাম দশ কিলোমিটার হাঁটা প্রয়োজন। নিয়মিত হাঁটলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। এছাড়াও নিয়মিত হাঁটাহাঁটি করলে চিন্তাভাবনা পরিষ্কার ও সুসংগঠিত হয়। প্রতিদিন হাঁটার জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ বা একটি সুন্দর পার্ক বেছে নিতে পারেন। এটি আপনার মানসিক অস্থিরতা কমাতে একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা বিকালে হাঁটতে বেরিয়ে যেতে পারেন।
৩. জাঙ্ক ফুড পরিহার করুন
খাবার ততটুকুই খাবেন যতটুকু প্রয়োজন। সবসময় স্বাস্থ্যকর এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করুন। অতিরিক্ত ভাজা-পোড়া, প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড) ও ফাস্টফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এসব খাবার খেতে ভাল লাগলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য ক্ষতিকর। যে খাবার যত বেশি প্রসেসিং করা হয় সেটি তত বেশি অস্বাস্থ্যকর। সবসময় তাজা প্রাকৃতিক খাবার খেতে চেষ্টা করুন। এসব খাবার থেকে প্রচুর জীবনীশক্তি পাওয়া যায়। প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় শাক সবজি রাখুন। এগুলো স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। মনে রাখবেন, স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। তাই নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল আচরণ করুন।
৪. কারো সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বলুন
বিচ্ছিন্নতা থেকে নানারকম মানসিক রোগের উৎপত্তি হয়। তাই নিজের মনের কথা ভরসাযোগ্য কারো সাথে শেয়ার করে নেওয়া খুব জরুরী। কারো সাথে খোলামেলা কথা বললে মন হালকা হয় এবং মানসিক স্থিতিশীলতা বজায় থাকে। প্রিয়জন, বন্ধু কিংবা পরিবারের লোকদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখুন এবং নিয়মিত তাদের খোঁজ খবর রাখুন। মানুষের সাথে সুসম্পর্ক আপনার জীবনের কোয়ালিটি প্রকাশ করে। একটা হেলদি, আন্তরিক সম্পর্ক জীবনে অনেক বেশি ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
৫. নির্দিষ্ট সময়ে প্রোডাক্টিভ কাজ করুন
প্রতিদিন ব্যস্ত সময়ের মধ্যেও দিনের একটি নির্দিষ্ট সময় রাখুন প্রোডাক্টিভ বা সৃজনশীল কোনো কাজে নিজেকে নিয়োজিত করার জন্য। এটি শুধু আপনার প্রধান কাজ নয়, এমন একটি মিনিংফুল অ্যাক্টিভিটি হতে পারে যা আপনাকে মানসিক শান্তি ও আত্মতৃপ্তি এনে দেয়। যেমনঃ বই পড়া, ছবি আঁকা, ফটোগ্রাফি, অথবা কোনো হাতের কাজ কিংবা যেকোনো ক্রিয়েটিভ কাজ। এটি এমন একটি কাজ যা শুধু আপনার নিজের জন্য উপকারী নয় বরং সমাজেও ভ্যালু এড করে।
এই লেখায় যে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ন পয়েন্ট উল্লেখ করা হয়েছে—পর্যাপ্ত ঘুম, হাঁটা, হেলদি খাবার, সুসম্পর্ক বজায় রাখা, কিছু সময় প্রোডাক্টিভ কাজে নিজের সময় ও শ্রম দেওয়া—এই অভ্যাসগুলো যদি আপনি গড়ে তুলতে পারেন, তাহলে কিছুদিনের মধ্যে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার জীবন কতটা সহজ, সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল হয়ে উঠছে।