সোনার বাংলা সার্কাস

Bangladesh

আজ বিজয় দিবস, ১৬ই ডিসেম্বর, আকাশে-বাতাসে, মাঠে-ঘাটে, রাস্তায় রাস্তায় সবখানে বাজছে দেশের গান। মুক্তির গান, বিজয়ের গান। অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশোনা করে ঘুমিয়েছিলাম। সকাল সকাল তীব্র সাউন্ড বক্সের শব্দে ঘুম ভাঙলো আমার।

"ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকায় মাথা।"

সুজলা সুফলা শস্যা শ্যমলা আমার এই দেশ, চারিদিকে সবুজ বনানী, কৃষকের মাঠ। এখানে থাকে আমার মা, আমার বাবা, আমার বন্ধুরা, এই দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না কভু। 

নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর, ৩০ লক্ষ শহিদের বিনিময়ে, এবং অসংখ্য মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই বিজয়, আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। এই কথাগুলো শুনে আসছি সেই দশ বারো বছর ধরে স্কুল থেকে কলেজ পর্যন্ত। কিন্তু কখনও কি প্রশ্ন করেছি, আধও কি তা সত্য? না, এক বাক্যে মেনে নিয়েছি। 

কিন্তু কিসের থেকে স্বাধীন হয়েছি আমরা, কার কাছ থেকে স্বাধীন হয়েছি, আসলেই কি স্বাধীন হতে পেরেছি আমরা? 

দেশের একটা বড় অংশ এখনো দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। গরীব মানুষেরা দিন দিন আরও গরীব হচ্ছে, আর ধনীরা দিন দিন আরও ধনী হচ্ছে। এভাবে যদি আরও কয়েকবছর চলতে থাকে তাহলে দেশে বড় একটি সমস্যার দেখা দিবে। 

বাংলাদেশে সরকারী কোন কাজ সহজভাবে করা যায় না, কাগজ পত্রে কোন একটু সমস্যা হলে তা সমাধানের জন্য দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, সরকারি অফিসে এ টেবিল থেকে সে টেবিল ঘুরতে হয়। তারা এমন ভান করে যেন সাধারণ মানুষ তাদের দাস, তবে বড়লোকদের সাথে তাদের অনেক খাতির। ঘুষের টাকা দিলে তাদের মুখে হাসি ফুটে। 

আইনের কথা কি বলবো আর, এই দেশে আইন বলতে কিছু নাই, এটা শুধু গরিবদের নিয়ন্ত্রণ করার একটা সিস্টেম, টাকা থাকলে এই দেশে খুনিদেরও কোন বিচার হয় না, টাকা দিয়ে এই দেশে সবই কেনা যায়। 

ছোটবেলা থেকে শুনে এসেছি পুলিশ মানুষের বন্ধু, কিন্তু বড় হওয়ার পর দেখছি পুলিশ আসলে চোরের বন্ধু। বাংলাদেশে পুলিশের প্রধান কাজ হচ্ছে চোরদের নিরাপত্তা দেওয়া আর ভাল মানুষদের হয়রানি করা, ভয় ভীতি দেখানো ইত্যাদি। 

আমরা সাধারণ মানুষেরাও কম খারাপ না, দেশটাকে নরক বানিয়ে ফেলেছি, বাইরের কান্ট্রিগুলোতে গিয়ে নিজের দেশের বদনাম করে ফেলেছি, অনেক লোক আছে যাদের দেশে কোন সমস্যা না থাকলেও বাইরে গিয়ে রিফিউজি সেজে আশ্রয় নেয়, নিজের স্বার্থের জন্য এরা দেশের মান সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দিচ্ছে। এদের জন্যেও দেশের কম নাম খারাপ হচ্ছে না। 

এদিকে যারা যোগ্য, শিক্ষিত তারা কোন কাজ কর্ম না পেয়ে বেকার জীবন যাপন করছে, সবাই বলে কাজ কর, কিন্তু কেউ কর্মসংস্থান তৈরি করছে না, একদিকে প্রচুর শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে, অন্যদিকে সেই হিসেবে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না। মানুষ যাবে কোথায়। এক হতাশার সমুদ্রে সবাই নিমজ্জিত হয়ে পড়ছি। 

একটা সাধারণ মানুষের জিবনের কোন দাম নাই, রাজনৈতিক অধিকার নাই, ভোট দেয়ার অধিকার নাই। শিক্ষা খাতে ভাজেট কম কিন্তু ডিফেন্সে সব টাকা দিয়ে দিচ্ছে সরকার, এছাড়া তো উপায় নেই, ডিফেন্স এর উপর নির্ভর করেই তো সরকার এখনো টিকে আছে। 

এই দেশে যখন যে সরকারই আসুক না কেন, সবাই দূর্নিতি করে, মাঝখান দিয়ে হোগা মারা খায় দেশের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষেরা। 

যারা কিছুটা শিক্ষিত, ভালোভাবে পড়াশানা করার সুযোগ পেয়েছে, অথবা ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে পড়েছে, তারা দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন না যে বাইরে গিয়ে তারা বেশ শান্তিতে আছে। সেখানে নতুন করে স্ট্রাগল করতে হচ্ছে। পরিবার পরিজন ছাড়া, বন্ধু বান্ধব ছাড়া কত কষ্ট পাচ্ছে। যদিও এই কষ্টগুলো তাদের শক্তিশালী করে তুলছে। তবুও জীবন আরেক্টু সুন্দর হলেও পারতো। তাই না? 

তরুণ প্রজন্মের কথা আর কী বলবো, রাজনীতি নিয়ে তাদের কোন সচেতনতা নেই, সারাদিন ফেসবুক, টিকটক এসব নিয়ে ব্যস্ত, আর পলিটিক্যাল লীডাররা তাদের রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করছে। কিন্তু সেটি তারা বুঝতেই পারছে না। 

যা অবস্থা দেখছি তাতে মনে হচ্ছে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুবই খারাপ, এমপি মন্ত্রীরা তাদের পরিবারকে বিদেশ পাঠিয়ে দিচ্ছে, সেখানে বাড়ি কিনছে, সুইচ ব্যাঙ্কে সব টাকা প্রাচার করে দিচ্ছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষ এক সময় না খেয়েই মরতে হবে। 

বাংলাদেশে দিন দিন অশিক্ষিতদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবাই ভাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পাচ্ছে না। প্রতিবছর প্রায় ১০ লাখের বেশি উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ছাত্রছাত্রী বের হচ্ছে। কিন্তু হিসেব করে দেখা যাবে বাংলাদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় মিলে সিট আছে মাত্র বিশ থেকে ত্রিশ হাজারের মত। তাহলে বাকি যারা ছাত্রছাত্রী আছে তারা কোথায় যাবে? অনেকে পছন্দের বিষয় পায় না আবার অনেকে টাকার অভাবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারে না। ফলে নিন্ম মানের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। 

এসব ছাড়াও সবচেয়ে বড় যে সমস্যাটি এখন বাংলাদেশে চলমান তা হচ্ছে ড্রাগ এডিকশন। অল্প বয়েসি ছেলে মেয়েরা বিভিন্ন কারণে হতাশ হয়ে পড়ছে আর বাজে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে তারা সিগারেট অথবা বিভিন্ন মাদকের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। যা ব্যাক্তিটির নিজের জীবনে, নিজের পরিবারে এবং সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। 

যাইহোক, এত কিছুর পরেও মনে আশা রাখি যে একদিন সব কিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে, একটা বড় ধরনের বিপ্লব হবে, সব কিছুর পরিবর্তন হবে, মানুষজন সারাক্ষণ সোশাল মিডিয়ায় ডুব দিয়ে না থেকে হাতে হাতে বই পত্র নিয়ে ঘুরবে, মানুষের জীবনে পরিবর্তন আসবে, সচেতনতা তৈরি হবে, দেশের কাঠামোতে পরিবর্তন আসবে। আমি মনে করি আমরাও একদিন সিঙ্গাপুর, ইউরোপ, আমেরিকার মত উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবো। এটা তখনই বাস্তবে সম্ভব হবে যেদিন আমরা নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারবো।

আজকের এই লেখা শেষ করছি প্রিয় একটা গানের লাইন দিয়ে, "জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো, এমন করে আকুল হয়ে আমায় তুমি ডাকো।"

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url