সেপিয়েন্স
সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ। কারণ মানুষের জ্ঞান আছে। চেতনা আছে। বুদ্ধি আছে। যা অন্য প্রাণীদের মধ্যে অনুপস্থিত। কিন্তু কীভাবে দুপায়ের এই প্রাণীটি জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, শক্তিতে সৃষ্টির সেরা জীব হয়ে উঠলো?
বর্তমান বিশ্বের একজন বিখ্যাত দার্শনিক এবং ইতিহাসবিদ হলেন ইউভাল নোয়া হারারি। তার লেখা সেপিয়েন্স বইটি মূলত মানুষের ইতিহাসের গল্প। সেপিয়েন্স বেশ জনপ্রিয় একটি বই। এটি এমন একটি বই যা আরো একশ বছর পরেও টিকে থাকবে। সেপিয়েন্স বইটিতে তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে লক্ষ লক্ষ বছর ধরে মানুষ ধীরে ধীরে এই পৃথিবীর বুকে আধিপত্য বিস্তার করেছে।
প্রায় ৭০ হাজার বছর আগে মানুষের প্রথম বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ হতে শুরু করে। মানুষ কল্পনা করতে শিখে। মানুষ ভাষা ব্যবহারের ক্ষমতা অর্জন করে। মানুষ গল্প বলতে শুরু করে।
মানুষ শিকারি জীবন থেকে কৃষিভিত্তিক জীবন যাপন করতে শুরু করে। ধর্ম, রাষ্ট্র, টাকা, ইত্যাদি আবিষ্কার করে যা মানুষকে সমাজে দলবদ্ধভাবে টিকে থাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মানুষ মূলত একটি গল্প বলা প্রাণী। সেপিয়েন্স বইটিতে হারারি আমাদেরকে গল্পের অসীম শক্তি সম্পর্কে ধারণা দিয়েছেন। কৃষিভিত্তিক জীবনযাপন মানুষের জীবনের পরিবর্তনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে। মানুষ ফসল ফেলে বেশি দূর জায়গা পরিবর্তন করতে পারতো না। বলা যায় এটি মানুষকে শিকারি জীবন থেকে পোষ মানানো পশুতে পরিণত করে। এইখানে একটা প্রশ্ন ওঠে যে আমরা ফসল চাষ করি নাকি ফসলই আমাদেরকে তাদের দাস বানিয়েছে!
কৃষিভিত্তিক সমাজে এক জায়গায় দীর্ঘদিন বসবাসের ফলে মানুষের জীবনে বিভিন্ন সমস্যার দেখা দেয় এবং রোগ জীবাণুর সৃষ্টি হয়। যা মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
হারারি সেপিয়েন্স বইটিতে সামাজিক, রাজনৈতিক, এবং অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষের ইতিহাস বর্ণনা করেছেন। তিনি দেখাতে চেয়েছেন আমরা কি ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি নাকি আমাদের জীবনে আরো কঠিন দুর্দশাকে আগম জানাচ্ছি।
এছাড়াও তিনি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সতর্কবার্তা দিয়েছেন।
সবমিলিয়ে সেপিয়েন্স শুধু ইতিহাসের বই নয়। বরং এটি আমাদের নিজেকে এবং আমাদের সমাজের বাস্তবতা বুঝতে শেখায়। বইটি আমাদের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভাবায়, আমরা কে, কোথা থেকে এলাম, এবং কোথায় যাচ্ছি!
